নদের চাঁদঃ
১৬১৩ খ্রীষ্টাব্দের মাঝামাঝি সময়ে বোয়ালমারীর মধুমতী নদীর তীরে চাঁদ নামক এক যুবক বাস করতো। তিনি কামরুপকামাখ্যা থেকে যন্ত্রমন্ত্র শিখে বোয়ালমারীতে আসে। এলাকার লোকজনকে তার যন্ত্রমন্ত্র দেখানোর জন্য সে কুমিরের রূপ ধারণ করে। এই রূপ দেখে তার স্ত্রী অজ্ঞান হয়ে পড়ে। কুমিরের রূপ ধারণ করার আগে সে তার স্ত্রীকে এক ঘটি পানি মন্ত্র পড়ে দিয়েছিলো এবং বলেছিলো কুমির হওয়ার পর ঐ পানি তার গায়ে দিয়ে সে আবার মানুষ হবে। কিন্তু তার স্ত্রী অজ্ঞান হওয়াতে কুমিরের গায়ে কেউ পানি ছিটিয়ে দিতে পারে নাই। এলাকার লোকজন কুমিরটিকে মারার জন্য লাঠি সোঠা নিয়ে আসে। সেই ভয়ে কুমির নড়াচড়া করলে লেজের আঘাতে ঘটির পানি পড়ে গিয়ে তার লেজে লাগে এবং লেজের কিছু অং মানুষের আকার ধারণ করে। তখন এলাকার লোক বুঝতে পারে এ কুমির নয় এ হলো চাঁদ। তারপর কুমির রূপি চাঁদ মধুমতি নদীতে চলে যায়। মাঝে মধ্যে কুমিরটিকে দেখা যেত। এক ইংরেজ ঐ কুমিরটিকে গুলি করে মেরে ফেলে। সেই দুঃখে সে মধুমতী নদীতে ডুবে আত্নহত্যা করে। উক্ত রূপকথার ঘটনার স্মৃতি রক্ষার্থে মধুমতি নদীতে নদের চাঁদ নামে একটি খেয়া ঘাট ও একটি পোস্ট অফিস আছে এবং ঐ এলাকার মৌজার নাম নদের চাঁদ রাখা হয়েছে।
কাটাকাগর দেওয়ান সাগের শাহের মাজারঃ
অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষার্ধে সাগের শাহ্ দেওয়ান বোয়ালমারীতে এসে সন্যাসীর কাজ শুরু করেন। তার অলৌকিক ক্ষমতার জন্য তিনি বোয়ালমারীর কাটাগড় এলাকায় জনপ্রিয়তা লাভ করেন। কাটাগড়ে তার সমাধি অবস্থিত। প্রতি বছর ১২ চৈত্র তার সমাধি স্থলে জমজমাট ধর্মীয় মেলা বসে।
সাতৈর শাহী জামে মসজিদঃ
আজ থেকে প্রায় ৭০০শত বছর পূর্বে আলা-উদ্দিন হুসাইন শাহ ছিলেন দিল্লির বাদশা। তখন এই সাতৈর গ্রামে বহু আওলিয়ার বসবাস ছিলো। তাদের মধ্যে হযরত শাহ্ সুফী শায়েখ শাহ্ ছতুরী (রাঃ) এর মুরিদ ছিলেন আলাউদ্দিন হুসাইন শাহ্। ঐতিহাসিক এই মসজিদটি সেই সময়ে নির্মিত হয়। সাতৈর শাহী মসজিদের পাশ ঘেষেই গেছে ঐতিহাসিক গ্রান্ড ট্রাংক রোড বা শের শাহ্ সড়ক। কেউ কেউ মনে করেন সাতৈর শাহী মসজিদ শের শাহের আমলের কীর্তি। মসজিদটি সম্পর্কে অনেক কাহিনী এলাকায় প্রচিলিত আছে। যেমন- (১) মসজিদ খানা আল্লাহর হুকুমে এক রাত্রে মাটি ফেটে গজিয়ে ওঠে, (২) মসজিদের ভিতরের খুটিঁ চারটি বিভিন্ন সময়ে হাসি-কান্না করে, (৩) মসজিদের পিলার গুলোর কাছে যা আশা করা যায় তাই পাওয়া যায়, (৪) মসজিদের ইট বাড়িতে রাখলে উঁই পোকা লাগে না, (৫) মসজিদের ধুলি গায়ে মাখলে যে কোন ব্যাধি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, (৬) মসজিদে এসে মানত করলে নিঃসন্তানদের সন্তান হয় ইত্যাদি। এ কথাগুলো বিশ্বাস করেই প্রতিদিন দূর-দুরান্ত থেকে বহু লোক নানা ধরণের মানত নিয়ে আসে।
কয়রা কালি মন্দিরঃ
বোয়ালমার উপজেলার কুমার নদের পাশে অবস্থিত অলৌকিক কীর্তিভরা এই কলী মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয় আজ থেকে প্রায় এক হাজার পূর্বে । মন্দির প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে পাওয়া যায়, কয়রা নামের এই কালী মন্দির প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পূর্বে এই গ্রামে এই অঞল ছিলো শশ্মান এলাকা। এখানে রামা ও শ্যামা নামের দুই ভাই দরিদ্রদের কল্যাণার্থে ডাকাতি করতেন। স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে রামা ডাকাত ও শ্যামা ডাকাত নামের দুই সহদর এই মন্দিরটি স্থাপন করেন। জাগ্রত এই কালী মন্দিরকে ঘিরে রয়েছে অনেক অলৌকিক কীর্তি, কাহিনী। কালী দেবীর আবির্ভাব, ভক্তদের মনোবাসনা পূর্ণতার অসংখ্য লীলা লোক মুখে প্রচলিত আছে। এই মন্দিরটি হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম একটি পূন্য তীর্থ ভূমি। প্রতি বছর মাঘী পূর্ণিমা তীথিতে গঙ্গা স্নান এবং মেলা বসে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস